জসিম উদ্দিনের হাসির গল্প। জ়ামাই সিরিজ।

0 2

একগ্রামে এক জামাই ছিল। সে চুপ চাপ টাইপের লোক। আজাইরা হাসি ঠাট্টা পছন্দ করতো না। কিন্তু তার শশুর সাহেব এতে অনেক নারাজ। সব জামাই শশুর বাড়িতে এসে শালা শালীদের সাথে ইয়ার্কি ফাজলামী করে, এই বেচারা চুপ করে থাকে,কেউ ফাইজলামী করতে এলে চোখ পাকিয়ে তাকায়। কি করা, শশুর সাহেব জামাইএর বাবার কাছে গিয়ে সব বললো। দুই বিয়াই এর মধ্যে অনেক দোস্তি ছিল। বাবাতো শুনেই ফায়ার। ছেলেকে ধরে ঝারি লাগালো, “তোর শশুর সাহেব বললো, তুই নাকি ওদের বাড়িতে গিয়ে বেকুবের মত চুপ করে থাকিস? এইরকম করলে লোকে নিন্দা করে, আর যদি চুপচাপ থাকিস তাইলে তোর ঠ্যাং ভেঙ্গে দেব। এইবার থেকে ফাইজলামি ইয়ার্কি করবি’।


জ়ামাঈ বেচাড়া চূপচাপ হলেও স্মার্ট ছেলে। সে শশুরের এহেন আচরনে খুব বিরক্ত হলো। বাপকে বললো “ঠিক আছে, তোমারে চিন্তা করা লাগবে না। আমি কালকে শশুর বাড়ি গিয়ে ফাইজলামী ইয়ার্কি করে আসবো”।

পরের দিন ছেলে শশুর বাড়িতে গিয়ে আগের বারের চেয়েও বেশি মনমরা। শশুর জিগাইলো, কি ব্যাপার বাব, তোমারে মনমরা লাগতেছে, সব ঠিক আছে তো?

জামাই বলে, “কি বলি আব্বাজান। সে বিশাল দুঃখের কথা, আমার বাবার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমরা তাকে দড়ি দিয়া বেধে রাখি। উনি মাঝে মাঝে দড়ি ছিড়ে বের হন আর একটা মোটা লাঠি নিয়া সবাইরে ধাওয়া দেন”।

দুই বিয়াইন সাহেবের অনেক দোস্তি ছিল। এই ঘটনায় উনি খুব বিচলিত হয়ে বলেন।“ইস কি সর্বনাশা কান্ড, কালকেই আমি তোমার বাবাকে দেখতে যাব”।

জামাই বললো, আব্বাজান দেখতে যাবেন কিন্তু খুব সাবধান। উনি খুব ভায়োলেন্ট কিসিমের পাগল। আপনি একটা মোটা লাঠি নিয়া যান। যদি দেখেন উনি লাঠি নিয়া আপনারে ধাওয়া দিচ্ছে আপনি লাঠি দিয়া উনার মাথায় বাড়ি দিবেন। শক্ত করে কয়েকটা বাড়ি দিলে উনার মাথা ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন উনি পুরা স্বাভাবিক”।

শশুরকে এই সব বলে জামাই ঐদিনেই বাড়ী ফিরে আসলো। ছেলের বাপ ছেলেকে জিজ্ঞাস করলো, কিরে খোকা, তুই এত তাড়াতাড়ী শশূর বাড়ি থেকে ফিরলি যে?

ছেলে বলে, কি বলি বাবা, ঐ বাসায় কি টিকার উপায় আছে, শশুর সাহেবের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, উনি একটা মোটা বাঁশ নিয়া সবাইরে ধাওয়া দিচ্ছেন।

ছেলের বাবাও বন্ধু কাম বিয়ান সাহেবের দুঃসংবাদে খুব কষ্ট পেলেন, বললেন, হায় হায়, আমার বন্ধুর এই অবস্থা। আমি কালকেই তোর শশূরকে দেখতে যাব। ছেলে বললো, আব্বা যাচ্ছ যাও আটকাবো না, কিন্তু খুব সাবধান। সাথে একটা মোটা দেখে ডান্ডা নিয়া যাও। যদি দেখ শশুর সাহেব তোমারে ধাওয়া দিচ্ছেন তুমি লাঠি দিয়া উনার মাথায় কয়েকটা বাড়ি মারবা। গোটা কয়েক ডান্ডা পড়লেই উনার মাথা ঠান্ডা হয়ে যায়।

পড়ের দিন সকালে দুই গ্রাম থেকে দুই বিয়াইন দুইটা মোটা লাঠি নিয়া রওনা হলেন। মাঝ পথে দুজন দূর থেকে দুজনকে দেখলেন,হাতের লাঠিও পরিস্কার দেখলেন। সাথে সাথে উনারা বুঝে গেলেন বিয়াইন সাহেবের মাথা গরম। দুইজনেই ডান্ডা নিয়া একে অপরকে ধাওয়া। কিছুক্ষনের মধ্যেই দুইজনের মধ্যে দমাদম লাঠা লাঠি শুরু হয়ে যায়।

গ্রামবাসীরা এই ঘটনা দেখে অবাক। তারা কোন রকমে দুই জনকে আলাদা করে বলে, তোমাদের দুই বিয়াইনের মধ্যে এত দোস্তি ছিল আগে, হঠাত কি হইলো যে তোমরা খালেদা হাসিনা স্টাইলে মারামারি করতেছ। দুই জনেই মাথা খারাপের কথা এবং রেফারেন্স হিসাবে জামাইএর কথা বললো।

পাড়ার মুরুব্বীরা জামাই এর কানে ধরে নিয়া আসলো। জামাই রণক্ষেত্রে এসে হাত জোড় করে বলে মুরুব্বীরা, আপনেরা বলেন আমার কি দোষ। আমার আব্বা আর শশুর আব্বা দুজনেই আমার ফাইজলামী না করায় ভীষন নিরাস, তাদের কথা মতই এইবার আমি শশুর বাড়িতে গিয়ে একটা মাত্র ফাইজলামী করছি, তাতেই এত রক্তারক্তি। বেশি করলে না জানি কি হত।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

Shares