বাংলা ভাষায় দেশে বিদেশে সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চা

0 3

আমাদের এই সোনার দেশে চাকরি নামের সোনা রূপার হরিণের পেছনে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াতে দৌড়াতে হাফাতে হাফাতে জুতোর তলা য় করতে করতে গাটের পয়সা কড়ি খরছ করতে করতে বাবা মা ভাই বেরাদর কিংবা বউয়ের ঠেঙ্গানী খেতে খেতে হতাশ হয়ে অনেকেই বিদেশ বিভুই পাড়ি দিয়েছেন কিংবা দিচ্ছেন কিছু কামাই রুজীর মাধ্যমে একটু শান্তি সুখের আশায়। সেই বৃটিশ আমল থেকেই এদেশের মানুষ চাকরি বা কাজ কারবারের খোজে সাহস করে অচেনা অজানা বন্ধুর পথে পাড়ি দেবার ইতিহাস রয়েছে। তবে বাংলার মানুষ যেদেশেই গেছেন সেদেশের কোন না কোন স্থানকেই একটা মিনি বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে দতার পরিচয় দিয়েছেন। যেমন লন্ডন শহরের বাংলাটাউন বলে খ্যাত ব্রিকলেন, ওলন্ডহ্যাম, বার্মিংহাম, আমেরিকার নিউইয়র্ক, কানাডার টরন্টো, সৌদি আরবের জেদ্দা শহরের মুছনা, গুলিল, পবিত্র মক্কা-মদীনা, দুবাই, বাহরাইন, উমান, কাতার, ইতালীর রোম, স্পেনের মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, জার্মানির বার্লিন, গ্রিসের এথেন্স, জাপানের টোকিও, দণি আফ্রিকার কেপটাউন, জোহানেসবার্গ, সিংগাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ও বড় বড় শহরের এক বা একাধিক এলাকায় বাঙালিপাড়া বাঙালিবাজার বা বাঙালিদের মিলনত্রে গড়ে তুলতে সাফল্যর স্বার রেখেছেন। এসব স্থানে গেলে মনে হয় ভিনদেশে যেন একচিলতে বাংলাদেশ। এসব স্থানে গড়ে উঠে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠন। রাজনৈতিক সংগঠনের শাখা প্রশাখা ডাল পালা পত্র পল্লবের প্রতিযোগিতাতো আছেই। সেসব স্থানে অনেকেই বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা, সাহিত্য সভা, সাহিত্য আড্ডা, সমাবেশ, সেমিনার করে যাচ্ছেন হরদম। কর্মব্যস্ততার ফাকে লেখালেখিও চালিয়ে যাচ্ছেন বিরামহীনভাবে। প্রকাশ করে যাচ্ছেন প্রিন্ট ও অনলাইন পত্র পত্রিকা ম্যাগাজিন বইপত্র সংকলণ ইত্যাদি। অত্যাধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সুবাঁধে আমাদের দেশ থেকে প্রকাশিত পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লিখে ও সংবাদ প্রেরণ করে প্রবাসে থেকেও জানান দিচ্ছেন সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চায় তাদের সরব পদচারণার।
যেহেতু প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটেই আমার জন্ম ও বসবাস তাই প্রবাসীদের সাথে একটা সেতুবন্ধন থাকাটাই স্বাভাবিক। আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধবদের অনেকেই প্রবাসের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চায় অর্জন করেছেন ইর্ষনীয় খ্যাতি। তাই বাংলা ভাষায় দেশে বিদেশে সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চা বিষয়ে একটি সেমিনার বা আলোচনা সভা আয়োজনের চিন্তাধারা আমার বহুদিনের। পরিকল্পনামাফিক একটি সফল আয়োজন শেষ করতে পেরে নিজেকে যেন একটু হালকা বোঁধ করছি।
সিলেটের প্রবীণ ও নবীন কবি সাহিত্যিক লেখক সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের পদভারে মুখরিত বাংলা ভাষায় দেশে বিদেশে সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চা শীর্ষক ব্যতিক্রমী এই আলোচনা সভায় আলোচকরা তাদের প্রাণবন্ত আলোচনায় বলেন, বাংলাদেশের মতো পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যে দেশের মানুষ ভাষার জন্য প্রাণ দিতে জানে। আমরা অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে সম্মানীত করতে সম হয়েছি। তাই দেশে বিদেশে বাংলা ভাষার চর্চা ও বিকাশ অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বেেত্র নিজের ভাষা মাতৃভাষা বাংলাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলাকে টিকিয়ে রাখতে শহীদ সালাম, বরকত, শফিউর ও জব্বারের ন্যায় মরণপণ সংকল্প নিতে হবে। বহুজাতীয় ভাষার যাতাকলে নিস্পেষিত এ ভাষাকে দেশ ও বিদেশের মাটিতে প্রচার ও প্রসার ঘটাতে তরুণ প্রজন্মকেই এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ দেশের শিতি তরুণরা সাহিত্য ও সাংবাদিকতার েেত্র বাংলাকে যে প্রাধান্য দিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এ কৃতীত্ব ধরে রাখতে বর্তমান প্রজন্মকে সাহিত্য চর্চায় আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
সাপ্তাহিক আমাদের সিলেট এর সৌজন্যে ও সিলেট লেখক ফোরামের ব্যবস্থাপনায় সাপ্তাহিক আমাদের সিলেট সম্পাদক ডাঃ মিফতাহুল হোসেন সুইট এর সভাপতিত্বে ও সিলেট লেখক ফোরাম সভাপতি কবি নাজমূল ইসলাম মকবুল এর পরিচালনায় গত ২৪ অক্টোবর সোমবার আলোঝলমলে সন্ধ্যায় সিলেটের মীরবক্সটুলাস্থ হোটেল সিলেট ইন এর কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট সংস্কৃতি কেন্দ্রের সভাপতি শেকড় সন্ধানী লেখক ও গবেষক সৈয়দ মোস্তফা কামাল বলেন, সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সুস্থ সাহিত্য চর্চায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশে বিদেশে আমাদের প্রাণের ভাষা মাতৃভাষা বাংলাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতার েেত্র আমাদেরকে আরও সচেতন হতে হবে। হলুদ সাংবাদিকতাকে পরিহার করতে হবে।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জাপান ইন্টারন্যাশন্যাল প্রেসকাব এর জেনারেল সেক্রেটারি, জাপানের প্রথম অনলাইন বাংলা পত্রিকা বিবেকবার্তা সম্পাদক পি.আর. প্ল্যাসিড বলেন, জাপানে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক কঠিন। সেখানে শুধু কাজ আর কাজ। কাজ ছাড়া সেখানে কারও মূল্যায়ন নেই। কিন্তু আমি সেখানে চরম বৈরী পরিবেশের মধ্যে বসবাস করেও একজন বাঙালি হিসেবে প্রাণের টানেই সেখানে বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চার কাজ অব্যাহত রেখেছি। পত্রিকা প্রকাশ করছি। বই লিখছি ও প্রকাশ করছি। বইয়ের স্টল দিচ্ছি। বাংলাদেশ থেকে লেখক কবি সাহিত্যিক সাংবাদিকরা জাপান সফরে গেলে সেখানে তাদের নিয়ে সাহিত্য সভা, সাহিত্য আড্ডার ব্যবস্থা করছি। সেখানে বাংলা চর্চার জন্য লাইব্রেরী করেছি। বাংলাদেশ থেকে সেই লাইব্রেরীর জন্য প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে বই নিচ্ছি। শেকড়ের টানেই আমি এসব করছি। আজ সিলেটবাসী আমাকে যে সম্মান জানালেন যে আতিথেয়তা দেখালেন তা কোনদিন ভুলার নয়। সিলেট সফরে এসে আমি অভিভুত আনন্দিত। সারাটা জীবন আমি বাংলা ভাষায় সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লেখক গবেষক ও কবি মুকুল চৌধুরী বলেন, ইউরোপ আমেরিকায় বহু বাঙালি বসবাস করছেন। বৃটেনে অনেক বাঙালি রয়েছেন। স্বাধীনতার পরের প্রজন্ম প্রবাসে বাংলা ভাষার চর্চা করছেন। শিতি তরুণগণ সাংবাদিকতায় অবদান রাখছেন। বাংলা ভাষার সুনাম আজ বিশ্বস্বীকৃত। শিগগিরই জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাভাষাকেও স্থান দেয়া হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। তিনি বলেন, বাংলা ভাষার প্রসার ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা ও সাংগঠনিক প্রজ্ঞা।
লেখক গবেষক শাহ নজরুল ইসলাম বলেন, সংবাদ মাধ্যম আজ সাম্রাজ্যবাদের দখলে। এজন্যই মানুষ সঠিক সংবাদ পাচ্ছেনা। তিনি সাহিত্য সাংবাদিকতায় অশ্লীলতা পরিহার করার আহবান জানান। তিনি আরও বলেন, দেশ বিদেশ থেকে প্রকাশিত বাংলা অনলাইন পত্র পত্রিকায় তাৎণিকভাবে সদ্য তৈরি করা গরম সন্দেশের স্বাদ পাওয়া যায় আর পরদিন প্রকাশিত প্রিন্ট পত্রিকায় আগের দিনের তৈরি করা সন্দেশকে আবার উনুনে দিয়ে গরম করে খেলে যে স্বাদ সেই স্বাদ পাওয়া যায়। তাই অনলাইন ও প্রিন্ট উভয় পত্রিকা একটি অপরটির পরিপুরক।
সিলেট লেখিকা সংঘের সভাপতি সালমা বখত চৌধুরী বলেন, মহিলাদের পিছিয়ে থাকলে হবেনা, তাদের এগিয়ে যেতে হবে। নারী পুরুষ সকলকে কাজ করতে হবে। নারীদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে হবে। বাংলা ভাষাকে দেশে বিদেশে আরও ব্যাপকভাবে বিকশিত করার ল্েয সিলেট লেখিকা সংঘ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সিলেটের অন্যান্য জেলায়ও আমরা লেখিকা সংঘের শাখা গঠন করেছি। শিগগিরই আমরা আমেরিকায়ও লেখিকা সংঘের শাখা গঠন করবো।
দৈনিক সিলেট ডট.কম ও মাসিক বিশ্ববাংলা সম্পাদক কবি মুহিত চৌধুরী বলেন, প্রবাসীরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই প্রবাসে সাহিত্য সাংবাদিকতা করছেন। প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে দেশপ্রেম ও সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি যে দরদ রয়েছে অন্য জাতির মধ্যে তা দেখা যায়না। তিনি আরও বলেন, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত বাংলা অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকাগুলি বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষাকে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে ব্যাপক অবদান রাখছে।
সভাপতির বক্তব্যে সাপ্তাহিক আমাদের সিলেট সম্পাদক ডাঃ মিফতাহুল হোসেন সুইট বলেন, জাপানে বসবাসরতো একজন নিবেদিতপ্রাণ সাহিত্যসেবী লেখক ও সম্পাদককে সম্মান দিতে পেরে আমরা আজ আনন্দিত ও গর্বিত। বাংলা ভাষায় দেশে বিদেশে সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন লেখক সাংবাদিকদের সান্নিধ্য পাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য গৌরবের। তিনি আরও বলেন, হলুদ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম শুরু করেছি। আমাদের সেই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। সাপ্তাহিক আমাদের সিলেট হলুদ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা অব্যাহত রাখবে।
সিলেট লেখক ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দৈনিক আলোকিত সিলেটের স্টাফ রিপোর্টার রুহুল আমীন নগরীর পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট লেখক ফোরামের সহসভাপতি আবু মালিহা।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দৈনিক কাজির বাজার পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ সুজাত আলী, প্রাবন্ধিক ও গ্রন্থকার সৈয়দ মবনু, দৈনিক জালালাবাদের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার চৌধুরী দেলওয়ার হোসেন জিলন, সিলেট লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমদ শফি, সিলেট লেখিকা সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক ইশরাক জাহান জেলী প্রমুখ। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাপ্তাহিক আমাদের সিলেটের উপদেষ্টা মোঃ ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ বার্তা ডট কম এর প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক মিজানুর রহমান, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবক আব্দুল হাই আজাদ বাবলা, সিলেট লেখক ফোরামের কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য কলামিস্ট ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার লুৎফুর রহমান, কবি ও প্রাবন্ধিক মোঃ তোবারক আলী, সিলেট লেখিকা সংঘের উপদেষ্টা নূরুন্নেছা চৌধুরী রুনী, সহ সাধারণ সম্পাদক মাসুদা সিদ্দিকা রুহী, কোষাধ্য আমিনা শহীদ চৌধুরী, সাহিত্য সম্পাদক তাহমিনা ইসলাম, সহ সাহিত্য সম্পাদক রেবিন চৌধুরী, লেখক উদয়ন বড়–য়া, সাংবাদিক কবির আশরাফ, সাংবাদিক মুহাম্মদ আব্দুল বাছির, শাহ জালাল, জাহেদ আহমদ, আং কাইয়ুম, নাজির আহমদ, জেনী রিবেক প্রমুখ। অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করেন, সিলেট লেখক ফোরামের সহসভাপতি সাংবাদিক কলামিস্ট স্বপন দাশ, শফিকুল ইসলাম সফিক, সাপ্তাহিক আমাদের সিলেটের স্টাফ রিপোর্টার ছালমা বেগম, শাকেরা বেগম মুক্তা প্রমুখ।
দেশে বিদেশে বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চায় বিশেষ অবদান রাখায় সম্মানিত অতিথি পি.আর. প্ল্যাসিডকে সাপ্তাহিক আমাদের সিলেট এর প থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন পত্রিকার সম্পাদক ডাঃ মিফতাহুল হোসেন সুইট এবং অতিথিবৃন্দ। সংবর্ধিত অতিথি পি.আর প্ল্যাসিড তাঁর লিখিত গ্রন্থ ‘দিনগুলি মোর’ সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দকে উপহার দেন।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

Shares