বন্ধ হওয়ার পথে বহু লেভেল কোম্পানি ডেসটিনি

0 1

চারদিক থেকে পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বহুল আলচিত মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের। বন্ধ হওয়ার পথে কোম্পানিটি। দেশের প্রায় অর্ধ কোটি মানুষের সাথে প্রতারনার দায়ে ডেসটিনির একে একে সব পথ বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে সরকার তাদের কয়েকটি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। বাকিগুলোর বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে অচিরেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই বহু লেভেল কোম্পানিটি ।

৫ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব জব্দ-
আয়কর অধ্যাদেশের ১১৭ অনুচ্ছেদের ৪ ধারা অনুযায়ী ডেসটিনির ৫ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে এ সংক্রান্ত এক চিঠি পাঠানো হয়েছে। আয়কর বিবরণীতে ভুল তথ্য দিয়ে সরকারের বিপুল পরিমাণের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে ডেসটিনির পাঁচ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয় বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, পরিচালকদের জীবনযাত্রার মান, কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত কমিশন, বিভিন্ন স্থানে বিনিয়োগ, কর অবকাশ সুবিধা বিবেচনা করে এবং তাদের এনবিআরে দায়ের করা আয়কর বিবরণী তুলনা করলে এ ফাঁকির তথ্য বেরিয়ে আসে। টাকার অঙ্কে এ ফাঁকির পরিমাণ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে সূত্র জানায়। ব্যাংক হিসাব জব্দ করা পরিচালকরা হচ্ছেন- ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন ও তার স্ত্রী, ভাইস চেয়ারম্যান গোফরানুল হক, চেয়ারম্যান আলহাজ মো. হোসাইন এবং পরিচালক অর্থ সাইদুর রহমান। সূত্র আরও জানায়, পর্যায়ক্রমে ডেসটিনির ৩৭ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে তদন্ত করা হবে। সন্দেহ করা হচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন কায়দায় রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ডেসটিনির পরিচালকদের জমা আয়কর বিবরণীর সঙ্গে প্রকৃত আয়ের বিস্তর ব্যবধান পাওয়া গেছে। তাই পরিচালকদের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। চাইলে পরবর্তী সময়ে তারা এনবিআরে এসে তাদের মতামত জানাতে পারবেন।

কক্সবাজারে ডেসটিনির স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ-
কক্সবাজারে ডেসটিনির অনুমোদনহীন স্থাপনার নির্মাণকাজ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেয়। বেসরকারি সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, কক্সবাজারের মেয়র এবং কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করে ৬ই মের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। আদালত একই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং নির্মাণ সামগ্রী অপসারণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। তিন সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, কক্সবাজারের মেয়র এবং কক্সবাজার  সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৮ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।  আদালতে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় পরিবেশ রক্ষায় স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপরও ডেসটিনি গ্রুপ সেখানে অনুমোদনহীনভাবে ভবন নির্মাণ করছে যা আইনের শাসনের পরিপন্থি।

ডেসটিনির পণ্য বিক্রয় পদ্ধতি প্রতারণামূলক-
বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ ও প্রতারণামূলক হিসেবে স্বীকৃত পদ্ধতিতেই পণ্য বিক্রি করছে বিতর্কিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড। মিথ্যা গুণাবলি বর্ণনা করে নিম্নমানের অপ্রয়োজনীয় পণ্য অত্যন্ত উচ্চ দামে বিক্রি করছে কোম্পানিটি। এখন অর্থ দিলে ভবিষ্যতে পণ্য বা মুনাফা দেওয়া হবে, এমন আশ্বাস দিয়ে বিশ্বের কোনো এমএলএম কোম্পানিই ব্যবসা করে না, কিন্তু ডেসটিনি করছে।
শুধু তা-ই নয়, ব্যাংক আইনকে পাশ কাটিয়ে তারা আমানত সংগ্রহ করছে। এই আমানত ফেরত না দিলে কোম্পানির মালিকদের ধরার কোনো সুযোগ নেই। আর এভাবেই দেশের মানুষের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

আর এ কাজে মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনীতিবিদ, শীর্ষ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা এবং ডিসি-এসপিদেরও ব্যবহার করছে ডেসটিনি। তাঁদের সঙ্গে ডেসটিনির মালিকদের ছবি তুলে জেলা ও উপজেলাসহ সব অফিসে বড় বড় করে টাঙিয়ে রাখা হচ্ছে। নতুন গ্রাহক-পরিবেশকদের আস্থা অর্জনের জন্য এ হলো ডেসটিনির কৌশল।
ডেসটিনির কর্মকাণ্ডের ওপর বাংলাদেশ পুলিশের (বিশেষ শাখা-এসবি) সাম্প্রতিক এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ১৭ এপ্রিল প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে ডেসটিনির বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এদিকে পূঁজি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন ডেসটিনির প্রতারনার শিকার সাধারণ গ্রাহকরা। তাদের অভিযোগ সরকার যদি খুব তাড়াতাড়ি কোন ব্যাবস্থা গ্রহন না করেন তা হলে ডেসটিনির প্রতারনায় নিঃস্ব হতে পারেন অনেক সাধারণ লোকজন। তাই সাধারণের দাবি সরকার যেন তাদের মূলধন ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করেন।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

Shares