সুস্থরা শোনালেন ভয়কে জয় করার গল্প
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আইসোলেশনে থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ১৩ জন করোনারোগী। এর বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক চিকিৎসকও সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মোট সুস্থ হওয়ার সংখ্যা ১৪। সিভিল সার্জন ও সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি জানায়, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বাড়ি গেছেন, নাসিরনগরে মারা যাওয়া প্রবাসীর পরিবারের চারজন ও আখাউড়ার চরনারায়ণপুর গ্রামের তিন জন। আরো কয়েকজন সূত্র হওয়ার পথে। পরবর্তীতে নেওয়া নমুনা সংগ্রহের ফলাফল এলে তারাও বাড়ি ফিরতে পারবেন।
এদিকে সুস্থদের মধ্যে আখাউড়ার মা ও মেয়ে রয়েছেন। আছেন ঢাকা ফেরত এক নারী। সুস্থতা নিয়ে তাঁরা বলেছেন বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা। জানালেন, ভয়কে জয় করতে পারলেই করোনাকে কুপোকাত করা যাবে।
সেবা প্রসঙ্গে তারা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্টরা বেশ দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতেন। খাবার দিতেন মাইকে ডেকে। তবে যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হয় তা ছিল যথেষ্ট। সকালের নাস্তায় ছিল ডিম, কলা ও রুটি। দুপুর ও রাতে দিয়েছে- ভাত, মাংস, মাছ, সবজি। রোজা শুরুর পর ইফতার ও সাহরি দেওয়া হয়েছে। সেন্টারের পরিবেশ মোটামুটি ভালো হলেও নিজেদেরকে অনেকটা বন্দি মনে হতো। নিয়মিতই আল্লাহর ইবাদত করতেন তারা।
মা, মেয়ের সুস্থ হওয়ার গল্প
১৭ দিন আইসোলেশনে থাকার পর করোনাযুদ্ধে জয়ী হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার গঙ্গানগর গ্রামের শিল্পী বেগম ও তার মেয়ে সুরভী আক্তার। নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলা, সংশ্লিষ্টদের সেবা আর মনোবল শক্ত রাখাই সুস্থ হওয়ার নেপথ্যে বলে তাদের মত।
মা শিল্পী বেগম জানালেন, করোনা পজিটিভ আসার খবরে ভড়কে যান। দেশে বিদেশের নানান কথা শুনে বেশ অসহায় মনে হয়। তবে কোনো ধরনের উপসর্গ না থাকায় কোথাও কোনো ভুল হলো কি-না ভাবতাম।
মেয়ে সুরভী জানান, ডাক্তার ও নার্সরা মনে সাহস জুগিয়েছেন। সেই সাহসকে মনে ধরেই বাঁচার স্বপ্ন দেখেছেন। কোনো উপসর্গ না থাকায় তাই শুধু প্যারাসিটামল, নাপা জাতীয় ওষুধ দিয়েছে। তবে যাদের ঠাণ্ডা, কাশি ছিল তাদের গরম পানি দিয়ে কয়েক বার ভাপ নিতে বলা হয়।
মনে হলো সবই গুজব
অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়ার সময় অনেক কান্নাকাটি করেছি ভয়ে। মানুষে বলতো করোনারোগীদের অবস্থা নাকি খারাপ হয়ে যায়। ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলে। আইসোলেশন সেন্টারে গিয়ে তো দেখি সব গুজব।
আইসোলেশন সেন্টারে ১০ দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে কথাগুলো বলেন আখাউড়ার উপজেলার আমোদাবাদ গ্রামের নূর ইসলামের মেয়ে রত্না বেগম। তবে সেখানে থাকাটা কারাগারে বন্দিজীবন মনে হতো বলে তিনি জানান।
জেলার নবীনগর উপজেলার বিটঘর গ্রামের লিটন মিয়ার স্ত্রী রত্না স্বামীকে নিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। বাবার বাড়ি আখাউড়াতে আসার পর তার নমুনা সংগ্রহের ফলে পজিটিভ আসায় ১৭ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আইসোলেশনে নেওয়া হয়।
রত্না বলেন, হাসপাতালের পরিবেশটা ছিল বাড়ির মতোই। কিন্তু বাইরে যাওয়া যেত না। সারাদিন একটি কক্ষে থাকতে থাকতে বন্দিজীবন মনে হচ্ছিল। বাড়িতে এসে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছি।
রত্নার ছোট বোন লিজা আক্তার গত ১১ এপ্রিল প্রথম করোনায় পজিটিভ হন। পরে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এখনো পরবর্তী নমুনা পরীক্ষার ফলাফল না আসায় তিনি আইসোলেশনেই আছেন।
রত্না জানান, কিভাবে তার বোন কিংবা তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন জানেন না। কারণ জ্বর, ঠাণ্ডা বা কাশি জাতীয় কোনো সমস্যা তখনো ছিল না এখনো নেই। জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত শ্বাসকষ্টজনিত কোনো সমস্যা নেই।
রত্না আরো জানান, আইসোলেশন কক্ষে চিকিৎসক কিংবা নার্স কেউ কাছে আসেন নি। নিজেই নমুনা সংগ্রহ করে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা মাইকে কথা বলতেন। ওষুধ ও খাবার টেবিলের ওপর রেখে মাইকে জানিয়ে দিত। একটা ফোন ছিল। সমস্যা হলে সেটির মাধ্যমে জানাতে বলতেন।