‘মন্ত্রীর জাগাত মন্ত্রী থাকবো, রাস্তা বন্ধ করতে অইবো কেন’

0 3


বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে সদ্য অনুমোদন পাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের জন্য প্রায় দেড় ঘণ্টা কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

বুধবার বিকাল পৌনে ৫টা থেকে সোয়া ৬টা পর্যন্ত মহাসড়কটিতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখে জেলা পুলিশ।

বিকাল সোয়া ৫টায় ওই মহাসড়ক ঘেঁষা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দাতিয়ারা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলাকালে শহরের কাউতলি থেকে ঘাটুরা এলাকা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। বিকল্প পথ হিসেবে ব্রাক্ষণবাড়িয়া শহরের ভেতরের রাস্তা ব্যবহার করতে বলা হয়।

এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তীব্র যানজট তৈরি হয়। এ ছাড়া, দুর্ভোগের শিকার হন স্থানীয় যাত্রীরা।

সরেজমিনে কাউতলি, দাতিয়ারা, পুনিয়াউট, পৈরতলা ও মধ্যপড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, যানজটের কারণে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা দিয়েছেন কয়েকশ মানুষ।

রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন জোৎস্না বেগম নামে এক নারী। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, সারাদিন কাজ করে অনেক ক্লান্ত হয়ে কাউতলি বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারেন পৈরতলার দিকে কোনো গাড়ি চলতে দিচ্ছে না পুলিশ। তাই বাধ্য হয়েই পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, “কোন মন্ত্রী জানি আইছে, এর লাইগ্যা রাস্তাডা বন্ধ কইরা রাকছে। এইডা কোনো কাম অইল? মন্ত্রীর জাগাত মন্ত্রী থাকবো, রাস্তা বন্ধ করতে অইবো কেন? অতলা (এত) দূরে কি আইট্টা (হেঁটে) যাওন যায়?”

পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে একই মহাসড়কে পায়ে হেঁটে কাউতলির দিকে রওনা হয়েছেন সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ সরকার ও সৌরভ আহমেদ। তারা বলেন, হেঁটে যাওয়ার সময় তো দেখলাম মন্ত্রীর অনুষ্ঠান চলছে। কিন্তু এ অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশ কেন গাড়ি চলাচল বন্ধ করলো, তা বুঝে উঠতে পারছি না। কারণ, সড়কে গাড়ি চললেও অনুষ্ঠানের কোনো সমস্যা হতো না। গাড়ি বন্ধ রাখায় অনেক মানুষের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে।

মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক আহমেদ নূর বলেন, “গাড়ি চলাচল বন্ধ করা হয়নি। সবকিছু স্বাভাবিক ছিল।”

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “কিছু ভারী যানবাহনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ওপর দিয়ে চলতে বলা হয়েছে।” উপমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের জন্য এমনটি করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। অন্যান্য দিনও এমন করে শহরের ওপর দিয়ে যানবাহন চলতে দেওয়া হয় কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্রস্তাবিত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, ইউজিসি সদস্য ড. সাজ্জাদ হোসেন, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার মীরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ড. দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৪ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন সংক্রান্ত কাগজে সই করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দাতিয়ারা এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবন ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার অন্য কোনো জায়গায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

প্রতিবেদনটি ডেইলি স্টারের ওয়েব পেইজ থেকে নেয়া।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

Shares