আখাউড়ায় গঙ্গাসাগরের গণকবর একাত্তরের বর্বরতার সাক্ষী

0 3

মো.সাদ্দাম হোসাইন : ২০ আগস্ট ১৯৭১।পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের প্রায় ২০০’শ জন নিরীহ পুরুষ গ্রামবাসীকে টানমান্দাইল ও জাঙ্গাল গ্রাম থেকে তাদের অবস্থানে নিয়ে আসে।

পাকবাহিনীর অভিযোগ তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাজ করছে, তাদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই, বলে হত্যা করার উদ্দেশ্য স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় হতভাগ্য ২০০’শ জন পুরুষ নিরীহ গ্রামবাসীকে ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট নির্মম অমানবিক নির্যাতন করে পাকিস্তানি সৈন্যরা।

সেইদিন সন্ধ্যায় ৩৩ জন পুরুষকে হত্যা করার উদ্দেশ্য রেখে বাকীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় দেড় কিলোমিটার দূরে আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগর গ্রামের দীঘিরপাড়। সেখানে আবারো চলে কয়েক দফা নির্যাতন। এমনকি পানি পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়নি। পানি চাইলে মুখে প্রস্রাব করে দেওয়া হয়। সেখানে তাঁদের আটকে রেখে চলতে থাকে অবর্ণনীয় নির্যাতন। তৎকালীন সময়ের আগরতলার রাজা তার স্ত্রী গঙ্গাদেবীর নামে নাম করন করা গঙ্গাসাগরের দীঘির পাড়ে তাদের দিয়েই বিরাট গর্ত করে পাকবাহিনী। পরে হাত বেঁধে সেই গর্তের সামনে জোড়ায় জোড়ায় দাঁড় করিয়ে মাথায়, বুকে, পেটে গুলি করতে থাকে নরপশুরা। টানা গুলি চালিয়ে চালানো হয় নারকীয় হত্যাকাণ্ড,  এভাবে ৩৩ জনকে হত্যা করা । পরে তাদের দিয়ে করানো গর্তে পুতে ফেলা হয় ৩৩ জন কে। কাউকে আবার অর্ধমৃত অবস্থায় পুতে ফেলে মাটি চাপা দেওয়া হয়।

গঙ্গাসাগরের গণহত্যায় নিহত শহীদ মো. ফজলুল হউক এর ভাতিজা মো. শাহ্ আলম, কিভাবে ৩৩ জনের পরিচয় সনাক্ত করল এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হবার পর সবাই গ্রামে ফিরে আসে এসে তখন গর্ত থেকে লাশ তুলে কারো পকেটে থাকা রুমাল, পরনের জামা ও পাঞ্জাবি দেখে স্বজনরা লাশ শনাক্ত করেন।
গণকবরে যার শহিদ হয়েছেন তারা হলেন মো. আবুল ফায়েজ, মো. তারু মিয়া, মো. আবুল বাশার, মো. রিয়াজ উদ্দিন, মো. হাজি কাছু মিয়া, মো. আব্দুল মান্নান,মো. গোলাম কাদির, মো. ডা. আবু তাহের, মো. তোতা মিয়া, মো. আবুল হাশেম মোল্লা, মো. আব্দুল গনি, মো. হায়দার আলী, মো. শামসু মিয়া, মো. আব্দুল মান্নাফ মিয়া, মো. মোজাউল হক সরকার, মো. মালু মিয়া, মো. ছোবাহান
মিয়া, মো. রাজু মিয়া, মো. খেলু মিয়া, মো. সারজুল হক, মো. তারাচান্দ মোল্লা, মো. বাবরু মিয়া, মো. আব্দুল আলিম, মো. সাধণ মিয়া, মো. ওমর আলি, মো. সমল মিয়া, মো. মোসলেম মিয়া, মো. ফজলুল হক, মো. খালেদ মোল্লা মো,আনু মিয়া ও মো. গোলাম মাওলা।

নিহত শহিদের মধ্যে টানমান্দাইলের ২২ জন, জাঙ্গালের ৭ জন ও মীমবাড়ি গ্রামের ১ জন রয়েছে। দেশ সল্পন্নত থেকে উন্নয়নশীলে পা দিলে ও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি জেলার আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসগরের গণকবরটির। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় গণকবরে প্রবেশের রাস্তারটি বেহাল দশায় পড়ে আছে, স্বাধীনতার ৪৭বছর পরও গণকবরে যাওয়ার রাস্তাটি পাকা করা হয়নি। অযন্ত আর বড় অবহেলায় পড়ে আছে গণকবরটিও। ব্যক্তি উদ্যোগে গণকবরের মাঝেই একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে শহীদদের গ্রামসহ নামের তালিকা।
স্থনীয় গ্রামবাসীরদাবী স্থানীয় প্রশাসনের যেন সুদৃষ্টি পড়ে এই গঙ্গাসাগরের গণকবরটির।

উল্লেখ্য সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেনে এবং স্থানীয় মেম্বারদের সহযোগিতায় গণকবরটির একটি গেইট নির্মান করা হয় ২০১৭ সালে,আখাউড়া উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা মো. কুতুব উদ্দিনের উদ্যোগে ২০০১সালে গণকবরের চারদিকে ইটের দেয়াল নির্মাণ করা হয়।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

Shares