আজ ৯ নভেম্বর দ্বিতীয় আশুগঞ্জ-ভৈরব ও তিতাস রেলসেতুর উদ্বোধন

0 1

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় আশুগঞ্জ-ভৈরব রেলসেতু ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া তিতাস নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতু আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু দু’টি উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে দ্বিতীয় আশুগঞ্জ-ভৈরব সেতুর ভৈরব প্রান্তে মেঘনা নদীর পাড়ে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) অর্থায়নে প্রায় ৭৮১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ও বাংলাদেশ রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে এ দু’টি রেলসেতুর নির্মাণকাজ গত জুন মাসে শেষ করা হয়। সেতু দু’টির উদ্বোধন উপলক্ষে মেঘনার দুই পাড় আশুগঞ্জ ও ভৈরবে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
প্রকল্প সূত্র মতে, প্রায় ৯৮২.২ মিটার দীর্ঘ এই রেলসেতুটির লোডিং ক্যাপাসিটি আগের সেতুর চেয়ে দ্বিগুণ। এতে মিটার গেজ ও ব্রডগেজ ট্রেন চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে এটি চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেমন ২ ঘণ্টা সময় কম লাগবে তেমনি রেলভ্রমণ হবে দ্রুত ও নিরাপদ। তা ছাড়া অধিক ওজনের ট্রেন চলাচলের সুযোগ থাকায় পণ্য পরিবহনও হবে সহজ ও নিরাপদ। সেতুটির বিশেষ দিক হচ্ছে দেশের ইতিহাসে এই প্রথম ১২০ মিটার স্পেন সংযোজন। সেতু দু’টির নির্মাণ কাজ শেষে সেতুর ওপর দিয়ে একাধিকবার পরীামূলকভাবে ৭৫ কিলোমিটার গতিবেগে ইঞ্জিনসহ ট্রায়াল ট্রেন ও গ্যাংকার ট্রেন চালানো হয়েছে। গত ৩ নভেম্বর ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন সেতু অতিক্রম করার মধ্য দিয়ে নিয়মিত ট্রেন চলাচল শুরু করা হয়। বর্তমানে এ দু’টি সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা-আখাউড়া ডাবল লাইনে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করছে। ১৯৭৭ সালের পর এই প্রথম মেঘনা নদীতে এই রেল ব্রিজ হলো।
এ উপলক্ষে দ্বিতীয় আশুগঞ্জ-ভৈরব সেতুর ভৈরব প্রান্তে মেঘনা নদীর পাড়ে রেলওয়ে বিভাগ আয়োজিত সুধী সমাবেশে রেলমন্ত্রী মো: মজিবুল হক, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো: আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার ড. আদর্শ সোয়ায়িকা ও সেতু ২টির প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হাই অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করবেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ভিডিও কনফারেন্সে সেতু দু’টি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হবেন।
রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের জন্য অন্যতম ও সহজ মাধ্যম ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। তাই বর্তমান সরকার এই রেলপথ ডাবল-ডুয়েল গেজে রূপান্তরের এক মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়। ইতোমধ্যে টঙ্গী-ভৈরব, চট্টগ্রাম-লাকসাম অংশের ডাবল লাইন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আশুগঞ্জ উপজেলার যাত্রাপুর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাতশালা পর্যন্ত ডাবল লাইন আগে থেকেই ছিল। কিন্তু আশুগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে যাত্রাপুর পর্যন্ত এক কিলোমিটার রেললাইন, মেঘনা নদীর ওপর দ্বিতীয় রেলসেতু ও ভাতশালা স্টেশনের কাছে তিতাস নদীর ওপর দ্বিতীয় রেলসেতু না থাকায় এত দিন ভৈরব থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডাবল লাইনে বিরতিহীনভাবে ট্রেন চলাচল চালু করা সম্ভব হয়নি। ভৈরব-আখাউড়া ডাবল লাইন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আশুগঞ্জ-ভৈরব সীমানায় মেঘনা নদীর ওপর দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতু, তিতাস নদীর ওপর দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতুসহ আরো কিছু আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণকাজ করা হয়। এ দু’টি সেতু বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৭৮১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যার বেশির ভাগ ভারতীয় ঋণসহায়তায় (এলওসি) আওতাভুক্ত।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.