বিরোধ জায়গার মামলা নারী নির্যাতনের !
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল : জায়গা জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে হয়েছে সংঘাত সংঘর্ষ। আহতও হয়েছেন কয়েকজন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কৌশলে দায়ের করা হয়েছে নারী নির্যাতন মামলা। এলাকায় কেউ গেলেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান ভিকটিম ৪ সন্তানের জননী (৪৫)। ইউপি চেয়ারম্যান সহ গ্রামের একাধিক মুরব্বি এ মামলাকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলছেন। ওই এলাকার অনেক অপকর্মের হোতা প্রভাবশালী কেফায়েত উল্লাহর (৫৫) মদদে গ্রামে অশান্তি বিরাজের অভিযোগও করেছেন তারা। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার বদলা নিতে ব্যস্ত কেফায়েত। উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের এ ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে গ্রামবাসীকে। সর্বত্রই বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা।
সরজমিনে জানা যায়, গত ৩ বছর ধরে আবদুল আলী (৫৫) ও একই গোত্রের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আবু তালেবের (৭০) মধ্যে দেড় একর ভূমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিকবার মারধর ও সংঘর্ষ হয়েছে। ৬টি আদালত ও ৩টি ফৌজধারী মামলা চলমান রয়েছে। সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি সরকারি আমীন জায়গা মাপতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় আবু তালেবের ভাতিজা গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী সোহাদা বেগম (৪২) বাদী হয়ে ১ কিলোমিটার দূরের বাসিন্ধা মো. হাবিবুর রহমান (৩৫) এর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করেন। ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, মুরব্বি মো. এলাজ উদ্দিন ভূইয়া (৭০), হাজী সামছুল ইসলাম (৭৫) ও হাজী সিদ্দিকুর রহমান সহ অনেকে বলেন, জায়গার প্রকৃত মালিক আবদুল আলী গংরা। দখলও তাদের। এ গ্রামের আতঙ্ক প্রভাবশালী কেফায়েত উল্লাহ সহ কিছু ভূমি দস্যুর মদদে তালেব অসহায় দরিদ্র লোকজনের জায়গা দখলের চেষ্টা করছে। একাধিকবার সালিস সভা হয়েছে। রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন তালেব ও তার লোকজন। এরা সরকারি আমীনও মানে না। গত ১০ জানুয়ারি সরকারি লোক আসলে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরে কেফায়েত উল্লাহ জর্জ কোর্টে কর্মরত তার ছেলের সহায়তায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গ্রামের নিরপরাধ লোক হাবিবুর রহমানের নামে নারী নির্যাতন মামলা করেন।
মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রামের লোকজনকে জেলে পাঠানো, ফায়দা লুটা কেফায়েতের কাজ। এ জন্য গ্রামে সবসময় বিশৃঙ্খলা লাগিয়ে রাখেন। ৩-৪ বার নির্বাচন করে একবারও তিনি ইউপি সদস্য হতে পারেননি। সুযোগে এ ক্ষোভ ও ঝারছেন তিনি। নির্যাতন মামলার তথ্য নিতে ২ জন লোক আসার খবর পেয়ে বাড়ি থেকে সটকে পড়েন ৫ সন্তানের জননী সোহাদা। সোহাদার মেয়ে (১৭) ও ছেলে সবুজ (১০) বলে, আম্মা বাড়ি নাই। কোথায় গেছে জানি না। ওইদিন আম্মারে কূব দিছে। আর কিছু জানি না।
অভিযুক্ত আসামী হাবিবুর রহমান বলেন, ওই মহিলাকে জীবনেও দেখিনি। আমার সাথে তাদের কোন ঝামেলাও নেই। সংসদ নির্বাচনে আমি সিংহকে সমর্থন করেছিলাম। আর কেফায়েতের ছেলে ভাই ভাতিজারা করেছে ধানের শীষ। ৩-৪ বার ইউপি নির্বাচনেও পরাজিত হয়েছে। এজন্য কেফায়েত আমার বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিয়েছে। গ্রামে তার কথা না শুনলেই মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার নজির ভূরিভূরি। আবু তালেব বলেন, ক্রয়সূত্রে আমি জায়গার বৈধ মালিক। মামলার বিষয়ে জানি না। হাবিবুর রহমান খুবই খারাপ ছেলে। কেফায়েত উল্লাহ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জায়গার বিরোধ ও মামলা এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। গ্রামের কিছু কৃমিনালের জন্য একাধিকবার ইউপি নির্বাচনে ফেল করেছি। এমন কোন শালার পুত আছে আমার সামনে এসব কথা বলতে পারবে? মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সরাইল উপজেলা মহিলা কর্মকর্তা মোসা. ফাতেমা আক্তার বলেন, মামলাটি যথাযথ ভাবে তদন্ত করছি। দ্রৃততম সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন দিব।